বানারীপাড়া প্রতিবেদক ॥ দেশজুড়ে মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতারে সাঁড়াশি অভিযান চললেও বানারীপাড়ার ইলুহারের মাদক সম্রাট নাসির উদ্দিন ও উদয়কাঠির ডা. হুমায়ুন গাজী বহাল তবিয়তে রয়েছেন। চলমান সাঁড়াশি অভিযানের মধ্যেও নাসির উদ্দিন ও হুমায়ুন গাজী তাদের মাদক ব্যবসা বীরদর্পে চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। সম্প্রতি এলাকাবাসী বিভিন্ন সময় নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে রাজধানীতে র্যাব ও পুলিশের দায়ের করা মাদক মামলার কপি সংযুক্ত করে নানা অভিযোগ এনে আইজিপি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, র্যাবের ডিজি, বরিশাল জেলা পুলিশ সুপার, বিশেষ শাখার পুলিশ সুপার ও বানারীপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি)’র কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। জানা গেছে, ইলুহার ইউনিয়নের পূর্ব মলুহার গ্রামের ৪ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা নাসির উদ্দিন ১৯৯১-৯৬ ও ২০০১-০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন বিএনপির ছত্রছায়ায় এলাকায় সন্ত্রাসের রামরাজত্ব কায়েম করেন। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে র্যাবের অভিযান শুরু হলে তার সহযোগী মিজান অস্ত্র সহ গ্রেফতার হলে নাসির উদ্দিন এলাকা ছেড়ে টেকনাফে অবস্থান নিয়ে তার পূরণো অবৈধ অস্ত্র ও মাদকের ব্যবসা শুরু করেন। ২০১২ সালের ৮ ডিসেম্বর নাসির উদ্দিন ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে র্যাবের হাতে ৮শ’ পিস ইয়াবাসহ গ্রেফতার হয়ে দীর্ঘদিন কারাবাস করেন। র্যাব-১০’র কর্পোর্যাল কেনেডী বড়–য়া বাদী হয়ে নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে রাজধানীর যাত্রাবাড়ি থানায় মাদকদ্রব্য আইনে ওই মামলা দায়ের করেন। এদিকে নাসির উদ্দিন ভারত ও মিয়নমারে প্রতিমাসে একাধিক বার আসা-যাওয়া করে দেশে ইয়াবা ও ফেন্সিডিলসহ বিভিন্ন মাদকের বড় চালান এনে বানারীপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় দালালের মাধ্যমে বিক্রি করে যুব সমাজকে ধংশের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছেন। মামলাবাজ হিসেবে পরিচিত সুভাষ হালদার নামের এক ব্যক্তি ভারতে সিট কাপড় ব্যবসার অন্তঃরালে নাসির উদ্দিনকে দিয়ে ওই সিট কাপড়ের ভিতরে সুকৌশলে মাদক ও অস্ত্র বাংলাদেশে আনেন বলে একটি বিশ^স্ত সূত্রে জানা গেছে। অপরদিকে উদয়কাঠি ইউনিয়নের তেতলা গ্রামের আ. মন্নান গাজীর ছেলে কথিত হোমিও ডা. হুমায়ুন গাজীর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে সে মুন্সিগঞ্জে ইয়াবা ও রেকটিফাইড স্প্রিরিট (আরএস) তৈরীর কারখানা খুলে সেখান থেকে ইয়াবা ও রেকটিফাইড স্প্রিরিট বানারীপাড়াসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় চক্রের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। মাদকের পাশাপাশি সে অস্ত্র ব্যবসা করে বলেও একটি সূত্রে জানা গেছে। মুন্সিগঞ্জ থেকে আলুর বস্তায় এসব মাদক ও অস্ত্র বানারীপাড়া সহ বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয় বলেও ওই সূত্র জানিয়েছে। সুচতুর ডা. হুমায়ুন গাজী তার এ অবৈধ মাদক ও অস্ত্র ব্যবসা নির্বিঘœ করতে তার গ্রামের বাড়িতে এলেই বিশাল পার্টির আয়োজন করে থাকেন। সেখানে প্রশাসনের লোকসহ শীর্ষ পর্যায়ের বিশিষ্টজনরা অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকেন। প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তি ও প্রভাবশালীদের সঙ্গে সখ্যতা থাকায় এলাকাবাসী তার অবৈধ ব্যবসা সম্পর্কে সবকিছু জানলেও ভয়ে মুখ খুলতে চাননা। মাদক ব্যবসার টাকায় তিনি বানারীপাড়ার উদয়কাঠিতে ‘সৈতী’ ও বরিশাল শহরে ‘রাজ ভবন’ নামের দু’টি আলিশান বাড়ি নির্মাণ করেছেন। এছাড়াও তার আরও অনেক বিত্ত-বৈভব রয়েছে বলে জানা গেছে। অবশ্য নাসির উদ্দিন ও ডা. হুমায়ুন গাজী মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকার কথা সব সময়ই অস্বীকার করে থাকেন। এছাড়াও বানারীপাড়ার অপর শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীরাও ধরা ছোঁয়ার বাহিরে রয়েছে।
Leave a Reply